বাংলাদেশে শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠির জবাব দেবে বাংলাদেশ। একই
সঙ্গে একটি চিঠি দেওয়া হবে মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের মুখপাত্র মাইকেল
ফোরম্যানকেও। চিঠিতে তাঁদেরকে বাংলাদেশে এসে পোশাক কারখানা স্বচক্ষে দেখার
আমন্ত্রণ জানানো হবে ।
এসব তথ্য জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, যে ছয়জন
কংগ্রেসম্যান প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন তাঁদের একজন ছাড়া বাকিরা কখনো
বাংলাদেশের পোশাক কারখানা দেখেননি। তাঁদের দেওয়া চিঠি রাজনৈতিক। বাস্তবতার
সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এভাবে চিঠি দেওয়াকে
অশোভনীয় বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
সোমবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনার সঙ্গে বৈঠক শেষে
সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি জানান, চিঠির খসড়া তৈরি
হচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই তা পাঠানো হবে।
ওইদিন সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মার্কিন
রাষ্ট্রদূত। সাক্ষাৎ শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আগামী ডিসেম্বরে
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পুনর্মূল্যায়ন
করবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। এ গতিতে চললে
ডিসেম্বরে ভিন্ন চিত্র হতে পারে।’
গত ১০-১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে
শ্রমিক নির্যাতনের নালিশ করে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো একটি চিঠি দেখিয়ে এর
জবাব চান ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যান। চিঠিটি পাঠিয়েছেন ন্যাশনাল গার্মেন্টস
ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (এনজিডাব্লিউএফ) সভাপতি আমিরুল হক আমিন। ওই সংগঠনটি
বৈশ্বিক শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅলের সদস্য। তিনি ইন্ডাস্ট্রিঅলের লোগো
ব্যবহার করে চিঠিটি পাঠিয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, আমিরুল হক আমিন কংগ্রেসম্যানদের কাছে চিঠি
পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি ওই চিঠি ইন্ডাস্ট্রিঅলকে পাঠিয়েছিলেন
বলে দাবি করেছেন।
কিন্তু ইতিমধ্যে ওই ছয় কংগ্রেসম্যানই আবার শ্রমিক নির্যাতনের অভিযোগে
চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, যার অনুলিপি বাণিজ্যমন্ত্রী ও
পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকেও দেওয়া হয়েছে।
তাঁদের চিঠির জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন,
'যে ছয়জন কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তাঁরা
হাইলি পলিটিক্যাল। তাঁদের ছয়জনের একজন ছাড়া বাকিরা বাংলাদেশের কোনো কারখানা
দেখেননি। তাঁদের চিঠির সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোনো মিল নেই।'
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, 'হয়তো কেউ তাঁদের প্রভাবিত করেছে। এর
পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা হয়তো একটি চিঠি দিয়েছেন। এটা তাঁদের পক্ষে অশোভনীয়।
বাংলাদেশ রক্তে প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন দেশ। সেই দেশের অভ্যন্তরীণ
ব্যাপারে কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না- এটা সবারই জানা। কংগ্রেসম্যানদের
আমরাও চিঠি দিচ্ছি। তাঁদের বলছি, তাঁরা বাংলাদেশে এসে দেখুক।'
একই সঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তরের মুখপাত্র মাইকেল
ফোরম্যানকে চিঠি দেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, 'ফোরম্যানই আসল ব্যক্তি। তিনিই
বাংলাদেশের বিষয়গুলো দেখেন। তিনি উপমহাদেশে সফরে আসবেন। আমরা তাঁকে চিঠি
দেব, যাতে তিনি বাংলাদেশে আসেন। তিনি এলে তাঁকে নিয়ে আমরা কিছু কারখানা
পরিদর্শন করব।'
বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডাব্লিউ মজিনা বাংলাদেশের পোশাক
খাতের বিভিন্ন অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরেন। ১৫৭টি ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন, এক
হাজার ৫০০ কারখানা পরিদর্শন, পরিদর্শক নিয়োগ, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার
উন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ সন্তোষজনক উন্নতি করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি
বলেন, বাংলাদেশকে আরো অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
মজিনা বলেন, 'আমি বলেছি, বাংলাদেশের অগ্রগতি হচ্ছে। আমি আশা করি উন্নতির
এ গতি অব্যাহত থাকবে। সেটা হলে আগামী ডিসেম্বরে চিত্র পাল্টে যাবে।'
২০১৩ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে।
১৬ দফা কর্মপরিকল্পনা দেয় বাংলাদেশকে। ছয় মাস পরে যা পর্যালোচনা করার কথা
ছিল। কিন্তু পরের মাসে মূল জিএসপি কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তোফায়েল
আহমেদ বলেন, কংগ্রেস জিএসপি স্কিম পুনর্বহাল করলে ডিসেম্বরে পুনর্মূল্যায়ন
হবে। এখন কোনো দেশের জন্যই জিএসপি সুবিধা নেই।




